আজ রবিবার, ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চিন্ময় কৃষ্ণের মুক্তি দাবি করেছেন ফরহাদ মজহার

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

Sharing is caring!

Manual7 Ad Code

টাইমস নিউজ 

 

সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবি করেছেন কবি ও গবেষক ফরহাদ মজহার। আজ মঙ্গলবার তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ দাবি করেন। সেই সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের একটি ছবিও পোস্টের সঙ্গে জুড়ে দেন তিনি।

Manual6 Ad Code

গত ১৮ নভেম্বর হাটহাজারীতে ইসকন পরিচালিত শ্রীশ্রী পুণ্ডরীক ধাম মন্দির পরিদর্শন করেন ফরহাদ মজহার। ওই সময় তাকে স্বাগত জানান চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। এ নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও এর কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি।

কোনো ধরনের সম্পাদনা ছাড়াই তার পোস্টটি রেডটাইমস পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

Manual5 Ad Code

‘‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে অবিলম্বে মুক্তি দিন, সনাতন ধর্মাবলম্বিসহ ধর্ম ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা করুন, আত্মঘাতী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করুন।

হিন্দু মানেই দিল্লির দালাল, বিজেপির এজেন্ট, হিন্দুত্ববাদী এই ধরণের ঘৃণাবোধক সাম্প্রাদায়িক ট্যাগিং পরিহার করুন।

সর্বোপরি আমাদের বুঝতে হবে আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বাংলাদেশের পক্ষে নয়, বরং বিরুদ্ধে। মোটা মাথা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে সেটা মোকাবেলা করা যাবে না। মূর্খতা পরিহার করুন। যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে রাজনীতি ব্যাখ্যা করেন ও ক্রমাগত গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেন, তাদের সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এন্টেনা সাফ ও তীক্ষ্ণ করুন।

জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করবার যে শর্ত তৈরী হয়েছে, তা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা সম্ভব যদি আমরা পরস্পরের সাথে কথা বলি এবং জাতীয় ঐক্যমত তৈরীর মধ্য দিয়ে গণরাজনৈতিক ধারা শক্তিশালী করে তুলি। চাই সকলের আন্তরিক চেষ্টা।

আমাদের মধ্যে শুভবুদ্ধি জাগ্রত হউক। আসুন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবীতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। আমরা আশা করবো সরকার অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিবেন।

১. জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের পর শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে অন্তর্বতীকালীন উপদেষ্টা সরকার গঠিত হয়েছে। একদিকে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট, অন্যদিকে তথাকথিত আইন ও সাংবিধানিকতার আওয়ামি ফাঁদ – উভয়ের টানাপড়েনে পুরানা ফ্যাসিস্ট আওয়ামি রাষ্ট্রই আসলে কায়েম রয়েছে। আমরা অত্যন্ত দুর্বল, অকার্যকর এবং ভাত দেবার মুরোদ নাই কিল মারার গোঁসাই টাইপের একটি অথর্ব সরকার পেয়েছি।

Manual3 Ad Code

২. এই বাস্তবতায় হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণরাজনৈতিক ধারাকে শক্তিশালী করাই আমাদের কাজ। জাতি, ধর্ম, নারীপুরুষ ভেদের নিরসন এবং ঘৃণা, বিদ্বেষ , বিভক্তি ও বিভাজনের রাজনীতির বিপরীতে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমাদের দাঁড়াতে শিখতে হবে। কিন্তু পুরানা ফ্যাসিস্ট ও সাম্প্রদায়িক শক্তি বারবার আমদের চেষ্টাকে ব্যাহত করে চলেছে। গুজব, মিথ্যা অপপ্রচার ও নানান কিসিমের আজগবি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে জনগণের দুষমণরা ক্রমাগত জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। বাংলাদেশকে বিদেশী শক্তির লীলাভূমিতে পরিণত করছে। আমরা দেখছি, অলস মস্তিষ্কের নানান প্রকার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, ভূয়া খবর ও গুজব ছড়িয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। জুলাই ২০২৪ গণভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করবার জন্য পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোকে প্রধান কৌশল হিশাবে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।

Manual2 Ad Code

৩. এই আত্মঘাতী বিপদের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণের সুরক্ষার কথা আমাদের ভাবতে হবে। দরকার একদিকে দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা সরকারকে রক্ষা করা, অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণ বিজয়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ধর্ম ও জাতি নির্বিশেষে ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিরোধী জনগণকে সচেতন, সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করা।

৪. কিন্তু সরকার ও প্রশাসনে ঘাপ্টি মেরে বসে থাকা গণবিরোধী ও বাংলাদেশ বিরোধী চক্র বাংলাদেশের জনগণ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক চক্রান্ত এঁটে চলেছে। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে একের পর এক অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে যাচ্ছে। তার সর্বশেষ প্রমাণ হল চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কোন এক পুলিশের অনুরোধে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া। কারা এই পুলিশ যাদের ক্ষমতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চেয়েও অধিক, এমনকি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর চেয়েও তারা পরাক্রমশালী?

৫. গত ৩১ অক্টোবর চান্দগাঁওয়ের মোহরা এলাকার ফিরোজ খান চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর সহ ১৯ জন সনাতন ধর্মাবলম্বির বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলা করেন। উল্লেখ করা দরকার, ফিরোজ খান চট্টগ্রাম নগরের মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

৬. বন্ধুরা, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফল। গণ বিপ্লব আমাদের চেতনাগত রূপান্তর ঘটায়। এটা বুঝার জন্য সম্প্রতি রংপুর মহা সমাবেশে তাঁর বক্তৃতা শুনুন। খেয়াল করুন, তিনি কিভাবে জুলাই বিপ্লবের শহিদ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়ে থাকা আমাদের বীরদের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার অনুসারীদের বাংলাদেশের পতাকা মাথায় বেঁধে সমাবেশে আসতে বলেছেন। তিনি অকুন্ঠ চিত্তে রংপুর মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশংসা করেছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের সকলের চেতনার স্তরে যে গুণগত রূপান্তরের সম্ভাবনা তৈরি করেছে সেই সম্ভাবনা অমূল্য। ওই অমূল্য ধন হারানোর অর্থ নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার ভিত্তি হারিয়ে ফেলা। আমাদের কাজ হচ্ছে এই রূপান্তরকে আরো দ্রুততর করা এবং সনাতন ধর্মাবলম্বিদের ক্ষোভ বিক্ষোভ দুঃখ কষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে উপলব্ধি করে অবিলম্বে সকলকে বৃহত্তর সমাজে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। আমাদের বুঝতে হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশের নাগরিক। ধর্ম ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ। তা করতে হলে সনাতন ধর্মাবলম্বিদের ক্ষোভ বিক্ষোভ ব্যথা বেদনা অবশ্যই আমাদের সকলকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে শুনতে হবে। সমাধান বের করতে হবে।

৭. কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠেছে সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী-ফ্যাসিস্ট চক্রসহ পুলিশ ও প্রশাসনের একটি মহল। যারা এখনও ক্ষমতায় বহাল পুরানা আওয়ামি-প্রশাসনে যেমন অন্তর্ঘাতমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তেমনি বাংলাদেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে বাংলাদেশকে চরম অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছে। যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য দিল্লির স্বার্থে বাংলাভাষী, বাঙালি ও বাংলাদেশীদের মধ্যে পুরানা কলোনিয়াল সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রবল করা, যেন কোন অবস্থাতেই আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে না পারি। যে সকল দুষমন বাংলাদেশে ও উপমহাদেশে অসাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বীজ ক্রমাগত রোপন করে যাওয়া বাংলাদেশের সর্বনাশের কারন হয়ে উঠবে। আমাদের সতর্ক ও হুঁশিয়ার থাকতে হবে। ধৈর্য, সহনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে নাগরিক ও মানবিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমরা অবশ্যই জয়ী হব।’’

 

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code