আজ বৃহস্পতিবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাকরিতে বয়স সীমার অধ্যাদেশ নিয়ে নতুন বিতর্ক

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২২, ২০২৪, ০২:৩১ পূর্বাহ্ণ

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code

টাইমস নিউজ 

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ নির্ধারণে জারি করা অধ্যাদেশ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজের সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক, প্রিন্সিপাল এবং সরকারি কলেজের সহকারী ও সহোযোগী অধ্যাপক সরাসরি নিয়োগে বয়স কত হবে-এ বিষয়ে অধ্যাদেশে কিছুই বলা হয়নি।

Manual3 Ad Code

বিভাগীয় প্রার্থীদের বয়সসীমা কত হবে, তাদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিলযোগ্য কি না, তাও উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া সরকারি অফিসে কম্পিউটার পারসোনাল নিয়োগ অর্থাৎ, সহকারী প্রোগ্রামার, প্রোগ্রামার, সিনিয়র প্রোগ্রামার, সহকারী পরিচালক, সিনিয়র সহকারী পরিচালক, উপপরিচালক, উপমহাব্যবস্থাপক, সিস্টেম ম্যানেজার, মুখ্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী, সহকারী সিস্টেম অ্যানালিস্ট, সিস্টেম অ্যানালিস্ট, সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট, অপারেশন ম্যানেজার এবং কম্পিউটার অপারেশন সুপারভাইজার পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা কত হবে, তা প্রকাশিত অধ্যাদেশে উল্লেখ নেই। এতে বিপাকে পড়েছে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান কোনো মন্তব্য করেননি। তবে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, এ অধ্যাদেশ আবার সংশোধন করতে হবে। অন্যথায় জটিলতা আরও বেড়ে যাবে। কারণ, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার যেসব পদে ৩২ বছরের বেশি বয়সিদের নিয়োগ দেওয়া হয়, সে বিষয়ে অধ্যাদেশে কোনো কিছুই বলা নেই। এই অধ্যাদেশের ফলে তাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কমে গেছে। অর্থাৎ বয়সসীমা কমিয়ে দেওয়ায় তারা নিয়োগলাভের যোগ্যতা হারিয়েছেন।

ফিরোজ মিয়া উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১ অনুসারে সরকারি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৪০, সহযোগী অধ্যাপক পদে ৪৫ এবং প্রিন্সিপাল পদে ৫০ বছর নির্ধারণ করা আছে। শিক্ষা ক্যাডারে সহযোগী অধ্যাপক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪৫ এবং বিভাগীয় প্রার্থীদের ৫০ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা আছে। সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করে জারি করা অধ্যাদেশ প্রকাশের ফলে তারা নিয়োগ যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাদের নিয়োগ কীভাবে হবে, তা পরিষ্কার না।

Manual1 Ad Code

ফিরোজ মিয়া আরও বলেন, দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চ ডিগ্রিধারীরা সরকারের উচ্চপদে চাকরি পাচ্ছেন। নবম গ্রেড এবং নবম ঊর্ধ্ব পদে তাদের নিয়োগ হয়। সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ওইসব পদে ৪৫ বছর পর্যন্ত বয়সসীমা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু জারি করা অধ্যাদেশে ওই পদে কীভাবে নিয়োগ সম্পন্ন হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছুই বলা হয়নি।

Manual5 Ad Code

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারি অফিসের কম্পিউটার পারসোনাল নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯-এ বলা হয়েছে, পরিচালক/মহাব্যবস্থাপক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে কম্পিউটার সায়েন্স ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং/ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির স্মাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। বয়সসীমার বিষয়ে বলা হয়েছে ৪৫ বছর। উপপরিচালক/উপমহাব্যবস্থাপক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে প্রার্থীর বয়স ৪৫ বছর। উপপরিচালক/সিস্টেম ম্যানেজার পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে বয়সসীমা ৪৫ বছর।

সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে মুখ্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীর বয়সসীমা ৪৫, সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্টের ৪৫, সিনিয়র রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীর ৪৫, সিস্টেম অ্যানালিস্টের ৪০, সিনিয়র প্রোগ্রামারের ৪০, অপারেশন ম্যানেজারের ৪০, সহকারী সিস্টেম অ্যানালিস্টের ৩৫, প্রোগ্রামারের ৩৫, কম্পিউটার সুপারভাইজারের ৩৫ এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীর ক্ষেত্রে ৩৫ বছর নির্ধারণ করা আছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ নির্ধারণ করায় উল্লিখিত পদগুলোয় নিয়োগপ্রত্যাশীরা যোগ্যতা হারিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, বিভাগীয় প্রার্থীরা সরাসরি নিয়োগে আবেদন করার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগে নিয়োগ হবে, ওই মন্ত্রণালয় বা বিভাগে আগে থেকে কর্মরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিল করা ছিল। নতুন করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণের অধ্যাদেশে বিভাগীয় প্রার্থীদের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। এ বিষয়ে ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি পরিষ্কার করে বলে দেওয়া দরকার বিভাগীয় প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন কি না? অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফিরোজ মিয়া বলেন, একজন প্রার্থী কতবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে, তা বিধিমালায় উল্লেখ থাকবে। তবে উপরিউক্ত পদগুলোর নিয়োগে বয়স কত হবে, তা অধ্যাদেশে থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৮ নভেম্বর রাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা থেকে প্রকাশিত অধ্যাদেশে সরকারির পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোয় সরাসরি নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়।

অধ্যাদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সব ক্যাডারের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৩২ বছর। একইভাবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতাবহির্ভূত সব সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমাও ৩২ বছর। দীর্ঘদিন থেকে সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। এক যুগ ধরে বিভিন্ন সময়ে তারা এ দাবি নিয়ে রাজপথে নামেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে তা আলোর মুখ দেখেনি।

তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এ দাবি জোরালো হয়। এ নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে ২৪ অক্টোবর চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

Manual4 Ad Code

এতে বলা হয়, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর চাকরির যেসব পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বা অনূর্ধ্ব ৩২ বছর উল্লেখ রয়েছে, সর্বত্র ওই বয়সসীমা ৩২ বছর প্রতিস্থাপিত হবে। প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্ব স্ব নিয়োগ বিধিমালা বা ক্ষেত্রমতে প্রবিধানমালা বহাল থাকবে বলেও অধ্যাদেশে বলা হয়।

এ অধ্যাদেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা বা অসুবিধা দেখা দিলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই অধ্যাদেশের বিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, ওইরূপ অস্পষ্টতা বা অসুবিধা দূর করতে পারবে-এমন ক্ষমতাও নির্বাহী বিভাগকে দেওয়া হয়েছে।

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code