আজ বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলিফ হত্যা মামলায় হরিজনদের হয়রানি করা হচ্ছে

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ণ

Sharing is caring!


Manual5 Ad Code

টাইমস  নিউজ

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের মামলা ও তদন্ত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। কমিটির অভিযোগ করেছে, মামলা ঘিরে বাণিজ্য, হয়রানিও চলছে। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বিচারহীনতার যে নজির, আলিফ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে তারই পুনরাবৃত্তি চলছে।

Manual5 Ad Code

রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ড পরবর্তী পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন: পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন কমিটির নেতারা।

গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার হওয়া সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ পরবর্তী সহিংসতায় নিহত হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। চট্টগ্রাম আদালতের পাশেই রাস্তার ওপর পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। চিন্ময় দাসের অনুসারী ও ইসকন সমর্থকেরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়। তবে এই ঘটনায় ইসকনের সম্পৃক্ততা নেই দাবি করেছে ইসকন বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘মামলা দায়ের ও তদন্ত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। মামলাগুলোতে গণহারে আসামি করা ও তদন্ত পরিচালনা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের মনে হয়নি যে, এই হত্যার সঠিক বিচারের প্রশ্নে এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিভাগ আন্তরিক। আমরা চট্টগ্রামে পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফেরার পরে স্থানীয় থানার একজন এসআই সেবক পল্লিতে গিয়ে হরিজনদের হুমকি দিয়ে এসেছেন এবং বলেছেন যে, তারা যদি প্রকৃত অপরাধীদের ধরিয়ে দেন তবে যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন তিনি। হিন্দু ধর্মাবলম্বী সাধারণ মানুষজনও গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।’

Manual5 Ad Code

জ্যোতির্ময় অভিযোগ করে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে মামলা দায়ের, তদন্ত কোনোটিই সঠিক পথে এগোচ্ছে না এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগের মতোই সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরও সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।’

এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘হরিজনদের মধ্যে কেউ যদি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যদি সেটা তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিচার হতে হবে। কিন্তু যেভাবে গোটা সেবক কলোনিকেই হত্যাকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে, সেবক কলোনি উচ্ছেদের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, কোর্ট বিল্ডিংয়ে চাকরিরত সেবকদের (হরিজনদের) ছাঁটাই করা হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের বাইরে যারা বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাদেরও একই অজুহাতে ছাঁটাই করা হচ্ছে—সেটা গোটা সম্প্রদায়কেই হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।’

Manual5 Ad Code

সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, আইনজীবী আলিফ হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষীদের ফায়দা লুটতে দেওয়া চলবে না। আদালত প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ভাঙচুরের ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে হবে। এই ঘটনায় উসকানিদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে।

সেই সঙ্গে হরিজনদের হয়রানি বন্ধ; যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত; ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজগুলো পরীক্ষা; সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করা; গণগ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তার বাণিজ্য বন্ধ করা এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ সব অভিযুক্ত ও আটক ব্যক্তির বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

আসামি ও আটকদের আইনজীবীরা যাতে আদালতে জামিনের আবেদনসহ সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নির্বিঘ্নে নিতে পারেন তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

নতুন বাংলাদেশে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, ‘শুধু হরিজন হওয়ার কারণে বা ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কারও বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত নয়। সুষ্ঠু তদন্তের অনেক উপাদান রয়েছে। শহীদ আলিফের মৃত্যুকে যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা না হয়।’

আলিফ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘কিছু গোষ্ঠী স্বার্থ বা পরিস্থিতি তৈরির কিছু সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। অজ্ঞাতনামা আড়াই হাজার ব্যক্তির নামে মামলা দেওয়া হয়েছে, ব্যাপক একটা হয়রানি চলছে। পুলিশের গ্রেপ্তার বাণিজ্য, হয়রানি এখনো চলছে। এতে সাম্প্রদায়িক একটা দিকও আছে। এর পেছনে একটা গোষ্ঠী আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্য বিলোপ করা। কিন্তু ৫ মাস পরে এসে দেখছি, শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে অনেকেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বৈষম্যকে ব্যবহার করে নতুন করে নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হোক তা চাই না। এখনো যারা বিচার পাচ্ছেন না, তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করাই হবে নতুন বাংলাদেশের রাজনীতি।’

Manual1 Ad Code

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ডা. হারুনুর রশীদ, সীমা দত্ত প্রমুখ।

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code