আজ সোমবার, ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছে প্রেস উইং

editor
প্রকাশিত মার্চ ১১, ২০২৫, ০১:৪১ পূর্বাহ্ণ

Sharing is caring!

Manual8 Ad Code

টাইমস নিউজ  

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের জব্দ হওয়া ১২৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬৩৫ কোটি টাকার সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ।

এছাড়া ইউরোপ-আমেরিকাসহ পাঁচ দেশে বিপুল সম্পদ পাওয়া গেছে। আর অর্থ পাচারের জন্য প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত হওয়া ১১টি ঘটনার মধ্যে অধিকাংশই হাসিনা ও তার পরিবারের। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত বৈঠকে সোমবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। পরে এসব তথ্য প্রকাশ করে প্রেস উইং।

Manual6 Ad Code

বৈঠকের বিষয় ছিল ‘পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার, গৃহীত পদক্ষেপ ও চ্যালেঞ্জ।’ বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া অর্থ ফেরাতে প্রায় ২০০ আইনি সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। প্রক্রিয়াটি সহজ করতে ৩০টি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হবে। প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে অ্যাসেট রিকভারি এজেন্সি (সম্পদ উদ্ধার সংস্থা)। এসব প্রক্রিয়া সহজ করতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হবে।

সোমবারের বৈঠকে বিএফআইইউ জানায়Ñশেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জব্দ করা ১২৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা পেয়েছে বিএফআইইউ। এছাড়া ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দলিলমূল্যে রাজউকের ৬০ কাঠা প্লট এবং ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমিসহ আটটি ফ্ল্যাট অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার একটি অ্যাকাউন্টে রাশিয়ান ‘øাশ ফান্ড’-এর অস্তিত্বও মিলেছে। হাসিনা পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের হওয়া ৬টি মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে এবং পরিবারের ৭ সদস্যকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

Manual4 Ad Code

প্রেস সচিব বলেন, কতটা বেপরোয়াভাবে পাচার করা হয়েছে, তা দু-একটি উদাহরণে বোঝা যায়। একজন শিক্ষার্থীর টিউশন ফি হিসাবে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে।

Manual2 Ad Code

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাচারের অর্থ উদ্ধার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বিএফআইইউ প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উল্লেখ করা হয়, আর্থিক খাতে জালিয়াতি, দুর্নীতিসহ সরকারি চুক্তিতে অনিয়মের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে ৭৫ বিলিয়ন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব অর্থ প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকংসহ অন্যান্য ট্যাক্সহেভেন অফশোর (পাচারকারীদের নিরাপদ স্থান) দেশগুলোতে পাচার হয়েছে।

প্রেস সচিব বলেন, ‘টাকা পাচার ইস্যুতে ১১টি কোম্পানি ও স্বতন্ত্র ব্যক্তি নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। এই তালিকায় প্রথমেই আছেন শেখ হাসিনা ও তার পরিবার। পাচারকারীরা নানাভাবে বিদেশে টাকা পাচার করেছে।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, অনেক ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়তে যায়। একটা কেসে দেখা গেছে, একটি ছেলের টিউশন ফি হিসাবে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে। এটা দেখলে বোঝা যায়, মানি লন্ডারিংটা কীভাবে হয়েছে।’ এ সময়ে নতুন আইনটির ব্যাখ্যা করেন প্রেস সচিব। তিনি বর্তমানে সংসদ না থাকায় আইনটি কীভাবে প্রণয়ন করা হবে, তা জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, একটি নির্ধারিত পদ্ধতি হিসাবে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এটি করা হবে।

Manual6 Ad Code

তিনি বলেন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্টে উঠে এসেছে, দেশ থেকে ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে ‘ব্যাংকিং সিস্টেম’ থেকে। ‘এ টাকা উদ্ধারে প্রথম থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়াস ছিল। অধ্যাপক ইউনূস প্রথম থেকেই বলে আসছেন, পাচারের টাকা উদ্ধার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। কারণ এটা দেশের মানুষের টাকা। আমরা যেভাবেই হোক, টাকাটা ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছি।’ প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘পাচারের অর্থ ফেরাতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্স হয়। নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এসব অর্থ ফেরত আনতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১১টি কেস নিষ্পত্তি করতে আন্তর্জাতিক ল’ ফার্মস ও ফান্ডারস নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব কেসের মধ্যে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, এস আলম গ্র“প, বেক্সিমকো গ্র“পসহ বিভিন্ন শিল্প গ্র“পের নাম রয়েছে। সভায় উপস্থাপন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যে এই ১১টি কেসের সঙ্গে সম্পৃক্ত সম্পদ ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এসব কেসের কমপক্ষে অর্ধেক নিষ্পত্তি করাসহ অ্যাসেট রিকভারি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করবে সরকার।

শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে কোনো মূল্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চায়। সরকার ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ আইনি সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছে। প্রক্রিয়াটি সহজতর করার জন্য ৩০টি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে পারে। সভায় প্রধান উপদেষ্টা পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে আরও ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার এজন্য সহায়তা দিতে একটি বিশেষ আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code