আজ শুক্রবার, ২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নাস্তিক্যবাদ প্রচারের অভিযোগে খেরাফত মজলিশের ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে টাঙ্গাইলে পাঠাগার থেকে শত শত বই লুট

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ১২:০০ অপরাহ্ণ
নাস্তিক্যবাদ প্রচারের অভিযোগে খেরাফত মজলিশের ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে টাঙ্গাইলে পাঠাগার থেকে শত শত বই লুট

Oplus_16908288

Sharing is caring!

Manual2 Ad Code
জয়নাল আবেদীনঃ
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা শহরের ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগারের পাঁচ শতাধিক বই লুট এবং পাঠাগার বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুদিন ধরে বন্ধ পাঠাগারটি বন্ধ। পাঠকরা বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে উপজেলার বাঁশহাটি এলাকার অভয়ারণ্য পাঠাগারে এ লুটপাট চালানো হয়। বই লুটপাটের ঘটনায় শুক্রবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে পাঠাগার কর্তৃপক্ষ।
পাঠাগারের সভাপতি, সম্পাদকসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, ইসলামী খেলাফত মজলিশ ধনবাড়ী উপজেলা শাখার নেতা গোলাম রব্বানী তিন দিন আগে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জানান, নাস্তিকদের কারখানা ধনবাড়ী অভয়ারণ্য পাঠাগার উচ্ছেদ করা হবে। এ কাজে তিনি সকলের সহযোগিতা চান।
এরই প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক দল যুবক পাঠাগারে প্রবেশ করে উচ্চস্বরে বলতে থাকে, এ পাঠাগার নাস্তিকদের আস্তানা। এখানে নাস্তিকদের বই পড়ানো হয়।
শত শত যুবককে নিষিদ্ধ বই পড়িয়ে  নাস্তিক বানানো হচ্ছে। সমাজকে নষ্ট করা হচ্ছে। সুতরাং এ পাঠাগার ভেঙ্গে দেওয়া হবে। পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর পাঠকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়। আলমিরা থেকে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হুমায়ুন আহমেদ সহ প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাঁচ শতাধিক বই বস্তায় ভরে।
ইসলামী খেলাফত মজলিশের নেতা গোলাম রব্বানী তিন দিন আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
ইসলামী খেলাফত মজলিশের নেতা গোলাম রব্বানী তিন দিন আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
জানা যায়, ওই ঘটনার সময় পাঠাগারের সম্পাদক দুর্জয় ঘোষ অনুরোধ করে বলেন, পাঠাগারে সরকার নিষিদ্ধ বা নাস্তিকবাদ প্রচার করে এমন বই নেই। বই লুটের আগে তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করার অনুরোধ জানান। কিন্তু তারা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং বই পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে থাকে।
এ সময় ধনবাড়ী থানার একজন গোয়েন্দা পুলিশ হাজির হলে নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। এরপর বস্তাবন্দী বই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে রেখে তারা চলে যায়। ঘটনার প্রতিকার চেয়ে পাঠাগার সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ আজ শনিবার ধনবাড়ী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে  গোলাম রব্বানী স্থানীয় সংবাদকর্মীদের জানান, যারা এ পাঠাগার চালান তারা সবাই নাস্তিক। সুতরাং নাস্তিকতা বহন করে এমন পাঠাগার বন্ধ করতে হবে। এসব সব বই এজন্য বস্তাবন্দী করে ইউএনও অফিসে জমা রাখা হয়েছে।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন মাহমুদ জানান, ঘটনার পরপরই তিনি পাঠাগার পরিদর্শন করেন। বস্তাবন্দী বই নিষিদ্ধ কিনা তা জানেননা। বই গুলো খুঁজে দেখেননি। রোববার উভয় পক্ষকে অফিসে ডাকা হয়েছে। তখন যাছাইবাছাই  হবে নিষিদ্ধ বই রয়েছে কিনা। পাঠাগারে চড়াও হয়ে বই বস্তাবন্দী করা আইনসংগত  কিনা প্রশ্নে জানান, উত্তেজনা বা মব সৃষ্টির আশঙ্কায় প্রশাসন ধীরে সুস্থে অগ্রসর হচ্ছে।
গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের কর্ণধার আব্দুস ছাত্তার খান এই ঘটনায় এক বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি নিন্দা জানান। পাশাপাশি এর প্রতিকার চেয়েছেন।
ধনবাড়ী থানার ওসি এসএম শহিদুল্লাহ জানান, এটি বড় কোনো ঘটনা নয়। পাঠাগার কর্তৃপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। রোববার এটি মীমাংসা করে দেওয়া হবে।
এদিকে বিকেল ৫টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এক নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা যায়।
Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code