আজ রবিবার, ১৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন : অভ্যুত্থানের ৯ মাস পরও বড় পরিবর্তন সহজ হচ্ছে না

editor
প্রকাশিত মে ১৭, ২০২৫, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ণ
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন : অভ্যুত্থানের ৯ মাস পরও বড় পরিবর্তন সহজ হচ্ছে না

Sharing is caring!

সিনিয়র প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলসহ অনেকেই এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা বারংবার বলছেন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই হবে নির্বাচন।
 তবে, এর আগে রাষ্ট্রব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার করে যেতে চাইছে সরকার। এজন্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তবে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাঙ্খিত সংস্কারের সে পথ সহজ হচ্ছে না মোটেই।
শুক্রবার (১৬ মে) এক প্রতিবেদনে এমনই এক বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। ‘আফটার দ্য রেভল্যুশন, বাংলাদেশ ইজ হোপিং টু রিফর্ম’ শীর্ষক নিবন্ধে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান, শেখ হাসিনার পতন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ ১৬ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন ‘ভূমিকম্পে’ কাঁপছিল। শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ সরকারের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি কথাটি বলেন।
ক্ষুদ্র ঋণের পথিকৃৎ ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যা ধ্বংস হয়ে গেছে, তার সবকিছু ঠিক করার চেষ্টা করছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি; জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা আশাবাদী।
নিবন্ধে বলা হয়, এ আশাবাদই এখন প্রয়োজন। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে তাঁর শাসনামলের বাড়াবাড়ির নানা চিত্র সামনে আসছে। গত বছর প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে অভিযোগ করা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে বছরে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার পাচার করা হয়েছিল।
 হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অবশ্য তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আবারও ক্ষমতার এমন অপব্যবহার যাতে না হয়, সে জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরের সব দলই গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। তবে অভ্যুত্থানের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সহজ হচ্ছে না।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত সেপ্টেম্বরে ড. ইউনূস নির্বাচন, বিচার ব্যবস্থা, সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য সুপারিশ দিতে কমিশন গঠন শুরু করেন।
 এ কমিশনগুলোতে রয়েছেন সুশীল সমাজ ও একাডেমিক অঙ্গনের বিশেষজ্ঞরা। এসব কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার আরেকটি কমিশন (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) গঠন করে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এ পর্যন্ত ১৬৬টি সুপারিশ একত্র করেছে। সেগুলোকে নথিবদ্ধ করে মতামতের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে।
ড. ইউনূস জানান, এ পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দল মতামত দিয়েছে। এ ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করবে, যা নির্বাচন আয়োজনের পথ সুগম করবে এবং একটি ‘নতুন বাংলাদেশে’র সূচনা করবে।
 কিন্তু ঐকমত্যে পৌঁছানোটা জটিল বিষয়। প্রথমত, কোন কোন কমিশন থাকা উচিত, তা নিয়েই রাজনীতিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মতানৈক্য আছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য একটি কমিশন থাকা উচিত ছিল। অনেকে শিক্ষা খাত নিয়ে অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন।
সবচেয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিলম্বে গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ঘিরে। নারীদের আরও বেশি অধিকার দিতে এ কমিশনের সুপারিশে ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে ইসলামপন্থি দলগুলো।
তথাপি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে জড়িতরা আশাবাদী। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত কিছু পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন প্রক্রিয়া।
 জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের দ্বিতীয় পর্ব গত ১৫ মের পর যে কোনো দিন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আগামী আগস্টের মধ্যে একটি সনদ চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
যদি এ সময়সূচি অনুযায়ী সবকিছু এগোয়, তাহলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। অধ্যাপক ইউনূস দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে (তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না)। তবে এ বিলম্বের কিছু মূল্য ইতোমধ্যেই গুনতে হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করেছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বলই রয়ে গেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও নাজুক। এক জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংই মনে করেন, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ।
বিক্ষোভকারীদের সবচেয়ে সাধারণ দাবি, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। গত ১২ মে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। যে কোনো নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে ইসি।
আওয়ামী লীগের প্রতি ব্যাপক বিরূপ মনোভাব থাকা সত্ত্বেও দলটির এখনও কিছুটা সমর্থন রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আরাফাত জোর দিয়ে বলেন, দলটির প্রতি ‘জনগণের ম্যান্ডেট’ ছিল। কিন্তু ‘জিহাদিরা’ সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। তারা ‘বাংলাদেশে নিজেদের ন্যায্য স্থান পুনরুদ্ধারের জন্য লড়বেন’।
নিবন্ধে বলা হয়, ক্ষমতার বাইরে থাকলেও আওয়ামী লীগ এখনও দেশজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টিতে সক্ষম হতে পারে।