আজ বুধবার, ২৭শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতীয় কবি নীতিমালা প্রণয়ন সময়ের দাবি 

editor
প্রকাশিত আগস্ট ২৭, ২০২৫, ১২:২৫ অপরাহ্ণ
জাতীয় কবি নীতিমালা প্রণয়ন সময়ের দাবি 

Sharing is caring!

লায়ন উজ্জল কান্তি বড়ুয়া,
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বাংলাদেশের কবি নন, তিনি আমাদের স্বাধীনচেতা মনন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক। তাঁর সাহিত্য, সংগীত, প্রবন্ধ, নাটক এবং সাংবাদিকতার মাধ্যমে তিনি সমাজে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সমতার অগ্রদূত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু তাঁর অসামান্য অবদানকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রচার করার জন্য একটি সুসংগঠিত ও সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নীতিমালা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।
চেতনায় নজরুলকে জাগ্রত রাখতে আমাদের করণীয় :
১. গবেষণা ও শিক্ষার প্রসার – জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজরুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে “নজরুল স্টাডিজ” আলাদা বিভাগ বা কোর্স হিসেবে চালু করা। নজরুল বিষয়ক উচ্চশিক্ষা ও পিএইচডি গবেষণায় সরকারি অনুদান ও স্কলারশিপ প্রদান।
২. নজরুলের রচনার সংরক্ষণ ও প্রকাশনা – নজরুলের সমস্ত রচনা, গান, প্রবন্ধ ও পান্ডুলিপি একটি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল আর্কাইভে সংরক্ষণ। অনুবাদ কার্যক্রম জোরদার করে ইংরেজি, আরবি, হিন্দি, চীনা, ফরাসি ইত্যাদি ভাষায় নজরুল রচনা প্রকাশ। বিরল পান্ডুলিপি, সংগীতের নোটেশন ও অডিও-ভিজ্যুয়াল দলিলসমূহ পুনর্মুদ্রণ ও রেকর্ড সংরক্ষণ।
৩. নজরুল সংগীত ও সংস্কৃতির মান সংরক্ষণ – নজরুল সংগীতের সঠিক সুর, তাল ও উচ্চারণ রক্ষা করতে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট শক্তিশালীকরণ। জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম (বেতার ও টেলিভিশন)-এ নজরুল সংগীতের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ। নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য সার্টিফিকেশন কোর্স ও প্রতিযোগিতা আয়োজন।
৪. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচার – প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নজরুল উৎসব আয়োজন এবং প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিগুলোতে তার প্রতিধ্বনি সৃষ্টি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে “নজরুল চেয়ার” প্রতিষ্ঠা (যেমন—কলকাতা, লন্ডন, দিল্লি, নিউইয়র্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে)। বিশ্ব সাহিত্য ও সংস্কৃতি উৎসবে নজরুলের সাহিত্য ও সংগীত উপস্থাপন।
৫. নজরুল স্মৃতিধন্য স্থান ও জাদুঘর উন্নয়ন – নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়া, তাঁর বসবাসস্থল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাধিস্থলকে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে আধুনিকায়ন। নজরুল ইনস্টিটিউটকে একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক গবেষণা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কেন্দ্রে রূপান্তর।
৬. নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ চর্চা – স্কুল থেকে শুরু করে সব স্তরে নজরুলের অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী দর্শনকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা। নজরুলের নারী স্বাধীনতা, সাম্য, শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তির আহ্বানকে জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালার অংশ করা।
৭. অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা- সরকারিভাবে নজরুল গবেষক, শিল্পী ও প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদান, ফেলোশিপ ও পুরস্কার প্রদান। কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR)-এর আওতায় বেসরকারি খাতকে নজরুল বিষয়ক কর্মসূচিতে যুক্ত করা।
উপসংহার
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য, সংগীত ও চেতনা কেবল একটি জাতির নয়, সমগ্র মানবজাতির ঐতিহ্য। তাঁকে কেন্দ্র করে প্রণীত একটি সমন্বিত জাতীয় নীতিমালা শুধু তাঁর সৃষ্টির সংরক্ষণ নয়, বরং বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও অগ্রগতিশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর ভুমিকা রাখবে।
লেখক পরিচিতি : লায়ন উজ্জল কান্তি বড়ুয়া
সেক্রেটারী, লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং কর্ণফুলী এলিট।