আজ শনিবার, ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিল্লিতে তুলসী গ্যাবার্ড , বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলবেন?

editor
প্রকাশিত মার্চ ১৬, ২০২৫, ০৫:০৬ অপরাহ্ণ
দিল্লিতে তুলসী গ্যাবার্ড , বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলবেন?

Sharing is caring!

Manual8 Ad Code

টাইমস নিউজ 

৩ দিনের এক গুরুত্বপূর্ণ সফরে রবিবার (১৬ মার্চ) সকালে দিল্লিতে এসে পৌঁছেছেন মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের পরিচালক (ডিএনআই) তুলসী গ্যাবার্ড।

এই সফরে তিনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা-প্রধানদের এক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন, তেমনই আলাদা করে একান্ত বৈঠক করবেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভালের সঙ্গেও।

Manual5 Ad Code

অজিত দোভাল ও তুলসী গ্যাবার্ডের মধ্যকার বৈঠকে নানা বিষয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও অবধারিতভাবে আলোচিত হবে।

ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ও তিনি আলাদা করে তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং মোদি তাকে বর্ণনা করেছিলেন ‘সুদৃঢ় ভারত-মার্কিন সম্পর্কের জোরালো সমর্থক’রূপে। তুলসী গ্যাবার্ড নিজেও জানিয়েছিলেন—ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে তিনি খুবই মর্যাদা দেন।

তার মাত্র মাসখানেকের মধ্যে তুলসী গ্যাবার্ডের ভারত সফর তাই যথারীতি দিল্লির কাছে খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে।

তুলসী গ্যাবার্ড নিজে একজন ‘প্র্যাকটিসিং হিন্দু’– যদিও তিনি আদৌ ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন। তার মা ক্যারোল পোর্টার গ্যাবার্ড হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, নিজের সন্তানদেরও রেখেছিলেন হিন্দু নাম। তুলসী গ্যাবার্ডদের ভাইবোনদেরও নাম সে কারণে– ভক্তি, জয়, আর্য ও বৃন্দাবন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ডিএনআই পদে তুলসী গ্যাবার্ডকে মনোনীত করেন, তখন তার ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ’ গাইবার একটি পুরনো ভিডিও ভাইরালও হয়েছিল।

সারা বিশ্বে হিন্দুরা যেখানেই নির্যাতিত, সেখানে তাদের প্রতি সংহতি ও সমবেদনা প্রকাশে তুলসী গ্যাবার্ড কখনোই দ্বিধা করেননি।

ভারতে এসে সম্পূর্ণ হিন্দু রীতি মেনে নিজের বিয়ে করেছিলেন তুলসী গ্যাবার্ড

এছাড়া পাকিস্তানে ও আফগানিস্তানে হিন্দু ও শিখদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধেও সব সময় সরব ছিলেন তিনি। বস্তুত, মার্কিন কংগ্রেসে তিনিই ছিলেন প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী কংগ্রেস-উইম্যান। তবে রাজনৈতিক জীবনের বেশিটা ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে থাকলেও ২০২২ সালে তিনি রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন।

বিশ্বের ‘নির্যাতিত হিন্দু’দের জন্য মার্কিন ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের যে একটা ‘সফট কর্নার’ বা দুর্বলতার জায়গা আছে, তা সুবিদিত – আর ভারতও সেটিকেই কাজে লাগাতে চাইছে।

মার্কিন এই গোয়েন্দা-প্রধান তার ভারত সফরের প্রথম দিনেই (রবিবার) অংশ নিচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানদের একটি হাই-প্রোফাইল সম্মেলন বা সিকিউরিটি কনফারেন্সে, যেটির সভাপতিত্ব করছেন ভারতের এনএসএ অজিত ডোভাল।

এই সম্মেলনে ‘কোয়াড’ জোটের চার শরিকেরই (অস্ট্রেলিয়া, ভারত, আমেরিকা ও জাপান) গোয়েন্দা-প্রধান বা ইনটেলিজেন্স চিফরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া থাকবেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী সাতটি দেশের জোট জি-সেভেনের অন্য প্রতিনিধিরাও। যেমন- কানাডার গোয়েন্দা প্রধান ড্যানিয়েল রজার্স, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্সের প্রধান রিচার্ড মুর, নিউজিল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রমুখ।

এই সম্মেলনের আলোচ্যসূচি নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে সঙ্গত কারণেই। তবে মোটামুটি যা জানা যাচ্ছে তা হলো— বিশ্বের এসব দেশ কীভাবে তাদের ‘ইনটেলিজেন্স শেয়ারিং মেকানিজম’ বা গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের পদ্ধতিকে আরও উন্নত ও আধুনিক করে তুলতে পারে, সেটা নিয়েই প্রধানত কথা বলবেন নানা দেশের গোয়েন্দা-প্রধান বা নিরাপত্তা উপদেষ্টারা।

Manual1 Ad Code

পরবর্তী তিন দিন (১৭-১৯ মার্চ) ধরে অনুষ্ঠিত হবে স্ট্র্যাটেজিক আলোচনার প্ল্যাটফর্ম ‘রাইসিনা ডায়ালগ’– যুগ্মভাবে যেটির আয়োজন করছে ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

Manual4 Ad Code

তুলসী গ্যাবার্ড অংশ নিচ্ছেন এই রাইসিনা ডায়ালগেও। সেখানে তার ভাষণও প্রকাশ্য মঞ্চেই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা যাচ্ছে।

এই সিকিউরিটি কনফারেন্স ও রাইসিনা ডায়ালগের অবকাশে দিল্লিতে মিস গ্যাবার্ড আলাদা করে বৈঠকে বসবেন অজিত ডোভালের সঙ্গেও। ভারতের এনএসএ অবশ্য আরও কয়েকটি দেশে তার কাউন্টারপার্টের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন।

গত ৫ আগস্টের পর ভারত-মার্কিন সবোর্চ্চ স্তরে টেলিফোনে বা মুখোমুখি বৈঠকে যত আলোচনা হয়েছে– বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তাতে ছায়াপাত করেছে অনিবার্যভাবে। অজিত ডোভাল ও তুলসী গ্যাবার্ডের মধ্যে আলোচনাতেও তার কোনও ব্যতিক্রম হবে না নিশ্চিতভাবেই।

এর আগে নরেন্দ্র মোদি যখন টেলিফোনে বিগত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, তখন ভারতের পক্ষ থেকে সে দেশে কথিত হিন্দু নির্যাতনের প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে। এরপর যখন গত মাসে মোদি হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন, বাংলাদেশ নিয়ে সেখানেও দুজনের মধ্যে কথা হয়েছে।

তা ছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও তার মার্কিন কাউন্টারপার্ট মার্কো রুবিও কিংবা মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক উলজের সঙ্গে বৈঠকেও একাধিকবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন।

Manual1 Ad Code

ঢাকা ও দিল্লির বর্তমান সরকারের মধ্যে এই কথিত হিন্দু নির্যাতনের ইস্যু একটি অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ হিসেবে দেখা দিয়েছে, তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, ভারত সরকার ও ভারতীয় মিডিয়া ক্রমাগত এ বিষয়ে অতিরঞ্জিত ‘প্রোপাগান্ডা’ চালিয়ে যাচ্ছে, বাস্তবের সঙ্গে যার কোনও মিল নেই। যেসব হামলার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর প্রায় সবই যে চরিত্রে ‘রাজনৈতিক’, সেটিও তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code