আজ বুধবার, ২৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তুলসীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া

editor
প্রকাশিত মার্চ ১৯, ২০২৫, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ণ
তুলসীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে  বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া

Sharing is caring!

Manual4 Ad Code

টাইমস নিউজ

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও তথাকথিত ‘ইসলামি খেলাফত’ নিয়ে মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের (সিআইএ) প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের করা মন্তব্যকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সামালোচনা।

সোমবার সন্ধ্যায় ওই মন্তব্য প্রকাশের পর রাতেই প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

তিন দিনের ভারত সফরে গিয়ে দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশকে নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ওই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে খুব লম্বা সময় ধরে সেখানে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, ক্যাথলিক ও অন্যদের ওপর যে ধর্মীয় নির্যাতন, হত্যা ও অত্যাচার চালানো হচ্ছে সেটা আমেরিকার সরকার তথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য খুব বড় একটা উদ্বেগের জায়গা।

Manual3 Ad Code

এদিকে সোমবার রাতেই এ মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

ওই বিবৃতিতে তুলসীর এমন মন্তব্যকে বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের সুনাম ও ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করেছে, গ্যাবার্ডের মন্তব্য সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি বরং পুরো জাতিকে মোটা দাগে ও অযৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রায় দু’মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর তার প্রশাসনের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা এই প্রথম বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে এত কঠোর মন্তব্য করলেন।

Manual7 Ad Code

প্রশ্ন উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বাহিনী প্রধানের বক্তব্যই বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের প্রকাশ কি না? তুলসী গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য এখন বাংলাদেশকে কী বার্তা দিচ্ছে?

এই বক্তব্যকে একটা দেশের নীতি বলা যাবে না

ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছিলো। সরকার বিহীন এই তিনদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের বিভিন্ন স্থাপনার ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।

সেসময় সরকারের থেকে বলা হয়েছিল, যে সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কিংবা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো তারা কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন, তবে সংখ্যালঘু বলে কেউ আক্রমণের শিকার হন নি।

যদিও ওই সময়ের মধ্যে অন্তত উনত্রিশটি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ করেছিলো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। পরবর্তীতে দূর্গাপুজোর সময় সংখ্যালঘুদের মন্দির ও স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারও করা হয়।

পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে গত বছরের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতারের পর। সেই সময় আদালতে চিন্ময়ের অনুসারীদের হাতে নৃশংসভাবে একজন আইনজীবী খুন হয়।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের পর ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলগুলো বেশ আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শুরু করে। বাংলাদেশেও শুরু হয় ইসকন ও ভারত বিরোধী প্রচারণা।

এরপর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি, সামাজিক মাধ্যমে পতাকা অবমাননার ছবি প্রচারসহ ভারত ও বাংলাদেশে পরস্পরবিরোধী আগ্রাসী প্রচারণা, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু কিংবা তাদের উপাসনালয়ে ভাংচুর-হুমকির অভিযোগ উঠে।

এছাড়া ভারতে অবস্থানরত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নানা বক্তব্যও এ সম্পর্ককে আরও প্রকট করে তোলে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় আট মাসের বেশিরভাগ সময়ে ভারতের সঙ্গে সেই সম্পর্কের খুব বেশি উন্নতি আর দেখা যায়নি। যদিও সম্পর্কোন্নয়নে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টার কথা এর আগে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গেল কয়েক সপ্তাহ অনেকটা নিস্তরঙ্গ সম্পর্ক কাটলেও সোমবার ভারতে বসে বাংলাদেশকে নিয়ে মিজ গ্যাবার্ডের করা মন্তব্যকে ঘিরে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির মনে করছেন অসম্পূর্ণ তথ্যের কারণে মিজ গ্যাবার্ড ওই মন্তব্য করেছেন।

হুমায়ুন কবির বলেন, তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে যথাযথভাবে হয়তো অবহিত নন সে কারণে তিনি এ মন্তব্যটা করেছেন। কাজেই তাকে যদি আমরা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাটা জানাতে পারি তাহলে আমি মনে করি তিনি যেটা মনে করছেন সেটা হয়তো তার পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।

তুলসী গ্যাবার্ড যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন বলে তার বক্তব্যকে কম গুরুত্ব দিয়ে দেখার অবকাশ নেই মন্তব্য করে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, সেজন্যই আমার ধারণা বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই একটা প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে।

এই বিবৃতির বাইরে বাংলাদেশের আর কোনো কিছু এখন আর করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।

Manual1 Ad Code

গ্যাবার্ড তার সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্যাবিনেটের সদ্য দায়িত্ব নেওয়া সদস্যদের কথাবার্তা কেবল শুরু হয়েছে।

এ বিষয়টি উল্লেখ করে হুমায়ুন কবির জানান, এখন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমান বাস্তব অবস্থা তুলে ধরলে গ্যাবার্ডের অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে।

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের উত্থানে গ্যাবার্ডের মন্তব্য দেশটির অতীতের রেকর্ডকে অনুসরণ করে না বলে জানান তিনি। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে যেভাবে জঙ্গি কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান তৈরি করেছে, তথ্যউপাত্তের সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্য যে মেলে না, সেটা জোরালোভাবে তুলে ধরা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

তুলসী গ্যাবার্ডের এই বক্তব্যকে একটা দেশের নীতি বলা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা বক্তব্য তো আর একটা নীতি হয় না, একটা বক্তব্য একটা অবস্থান হতে পারে। কাজেই সেই অবস্থানটা যে বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ নয়, সেটা আমাদের তুলে ধরতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, যেসব সমালোচনা তৈরি হয়েছে, সেগুলোর কারণ খুঁজে বাংলাদেশকেই সমাধানের কথা ভাবতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার এই সংখ্যালঘু ইস্যুতে বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছিলো বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেগুলোও তুলে ধরা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, এ বিষয়টাকে ভালো করে অ্যাড্রেস (নজর দেয়া) করা দরকার। সমালোচনাটা বাড়তে থাকলে আদৌ ঠিক কি না, এভিডেন্স কোথায় এগুলো ভালো করে দেখা দরকার। যেহেতু একটা সমালোচনা আছে এটা আমাদেরই ঠিক করতে হবে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ফলে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে বলে মনে করছেন এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এটা নিয়ে একটা অ্যাটেনশন দিয়েছে, ফলে তার কী এভিডেন্স আছে সেটাও দেখা দরকার। ফলে বাংলাদেশের সরকারকেই এখন দৃশ্যত তুলে ধরতে হবে যে, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তারা ভয় – ভীতির মধ্যে নেই।

Manual1 Ad Code

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code