আজ বুধবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউনূস-মোদির বৈঠকের পর দুই দেশে সম্পর্কের শীতলতা কতটুকু উষ্ণ হবে?

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ৫, ২০২৫, ০১:২১ পূর্বাহ্ণ
ইউনূস-মোদির বৈঠকের পর দুই দেশে সম্পর্কের শীতলতা কতটুকু উষ্ণ হবে?

Sharing is caring!


Manual6 Ad Code

শাহিদা ইসলাম 

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আট মাস পর নিকটতম প্রতিবেশী দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ বৈঠককে ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে শীতলতা কাটানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে

Manual1 Ad Code

ইউনূস-মোদির বৈঠকের পর দুই দেশে সম্পর্কের শীতলতা কতটুকু উষ্ণ হবে , সেটা এখনো ভাবার  বিষয় ।

Manual2 Ad Code

অনেকের মতে, এ বৈঠকে বরফ পুরোপুরি না গললেও কূটনীতির স্থবির অবস্থা চলমান পর্যায়ে নিতে সহযোগিতা করবে। এছাড়া আট মাস পর হলেও বাংলাদেশ তার কনসার্নগুলো সামনাসামনি ভারতের শীর্ষ মহলে জানাতে পেরেছে। সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতকে বাংলাদেশের স্পষ্ট অবস্থানও জানানো হয়েছে।

Manual2 Ad Code

Manual8 Ad Code

ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের গতিপ্রকৃতিও এ বৈঠকের মাধ্যমে নিরূপিত হবে বলেও মনে করেন তারা। চীন সফরের পর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হলো যে বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ বিদেশ নীতি চায়। আন্তর্জাতিকভাবে এ বার্তাটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বৈঠকের ফলে যে দুই দেশের সম্পর্কে একেবারে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, তেমনটাও মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য এবং বিশ্বকে দেখানোর জন্য ভারত শেষ পর্যন্ত বৈঠকে বসেছে। তারা সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি তুলেছে। এটিকে তারা তাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার বানাতে চায়। তারা ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলছে, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৩ এপ্রিল শুরু হওয়া বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেন এ দুই নেতা। সম্মেলনে তাদের পাশাপাশি দেখা গেলেও দুই নেতার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে কি না, তা নিয়ে নানা আলোচনা ছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর দুই দেশের সাম্প্রতিক সম্পর্কের বরফ গলার জন্য বৈঠকটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের ফাঁকে এই প্রতীক্ষিত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো। এ বৈঠক নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি দুই দেশের মধ্যে জমে থাকা শীতল সম্পর্ক উষ্ণ করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বৈঠকে ড. ইউনূস নরেন্দ্র মোদিকে ২০১৫ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে তার কাছ থেকে একটি পদক গ্রহণের ছবি উপহার দেন।

এদিকে বৈঠকটি ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির প্রসঙ্গও ড. ইউনূস তুলেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্কের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন মোদি। সেজন্য দুই দেশের সম্পর্কের পরিবেশ নষ্ট করে-এমন মন্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সীমান্তে অবৈধ পারাপার বন্ধের পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আলোচনায় তুলেছেন।

জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ  বলেন, এতে (বৈঠকে) বাংলাদেশের একটা লাভ হয়েছে, সেটা হলো : গত আট মাসে বাংলাদেশের যে কনসার্নগুলো আছে, পানিসংক্রান্ত চুক্তি নবায়ন, তিস্তা চুক্তি, বর্ডার কিলিং, ভিসা-এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার জন্য। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ড. ইউনূস খুবই প্রাঞ্জল ভাষায় বাংলাদেশের কনসার্নগুলো নরেন্দ্র মোদির কাছে সামনাসামনি তুলে ধরেছেন। এদিক থেকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্পর্ক উন্নয়নে যা বক্তব্য, তা তিনি বলেছেন। বাংলাদেশের কী ক্ষতি হচ্ছে, সেটাও তিনি তুলে ধরেছেন। দুই দেশের সম্পর্কে যেন আর ক্ষতি না হয়, সেজন্য তিনি এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। সেদিক থেকে এ বৈঠক সফল হয়েছে যে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়গুলো সরাসরি মোদির সামনে বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু এটাকে বলা চলে ভারতের পক্ষ থেকে একটা ‘মিডিয়া ইভেন্ট টু টেক অ্যাডভান্টেজ’। বাংলাদেশকে একটা নিন্দনীয় ও বেকায়দায় ফেলার জন্য তারা (ভারত) শেষ পর্যন্ত এ মিটিংয়ে রাজি হয়েছে। এর মানে, দেখা করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা করেছেন তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য এবং বিশ্বকে দেখানোর জন্য। তারা হয়তো বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে দেশে-বিদেশে আরও বেশি করে প্রোপাগান্ডা চালাবে। কারণ, তারা এ বিষয়টা দুই নেতার বৈঠকে তুলেছেন। এছাড়া তারা মুখে জনকেন্দ্রিক সম্পর্কের কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে করছেন উলটো। তারা ভিসা বন্ধ করে দিয়ে রেখেছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তারা জনকেন্দ্রিক সম্পর্ক চায়, এটা কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম শহিদুজ্জামান  বলেন, কূটনৈতিক ভাষায় এটাকে বলে সম্পর্কের বরফ গলানো। মানে একটা স্থবির অবস্থা থেকে এখন একটা চলমান কূটনীতির পর্যায়ে এসেছে। এবং এটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দুই দেশেরই কিছু কিছু এমন জটিল বিষয় রয়েছে, যা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব হয় না। যেমন ভারত তার স্বার্থেই তার বাণিজ্যিক যোগাযোগ, এখানে তাদের যেসব বিনিয়োগ রয়েছে, সেগুলো বজায় রাখতে চায়। আবার বাংলাদেশ চায় ভিসা ব্যবস্থা চালু করতে। ফলে এ প্রক্রিয়াগুলো সামনে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, কূটনৈতিক যোগাযোগ তো ছিল। এখন যে একেবারে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, সেটা মনে করারও কারণ নেই। কারণ, আমাদের যে স্বার্থ আর ওদের (ভারতের) যে স্বার্থ, সেটা বিপরীতধর্মী। ভারত হয়তো দাবি করবে হাসিনার সময় যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো মেনে চলতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবে। তারা ট্রানজিট চাইলে বাংলাদেশ সরকার বলবে, এটা ফ্রি দেওয়া যাবে না। আবার আমাদের যে চাহিদা, সেগুলোও মেটাতে হবে। এছাড়া তারা বর্তমান সরকারকে মানতে চায় না। তারা চায় নির্বাচন। আর ভারত যদি আগের মতোই হস্তক্ষেপ করে, তাহলে সম্পর্ক খারাপের দিকেও যেতে পারে। ফলে দুই পক্ষকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, আমরা ভারতের দিকে হেলে পড়ে থাকব না। গত ১৫ বছর যেটা হয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে একটা সুস্থ-স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয় সম্পর্ক আমাদের লাগবে। যেটা হবে উইন-উইন। তারাও জিতবে, আমরাও জিতব। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগের সপ্তাহে চীন গিয়েছিলেন, পরের সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন। এতে একটা বার্তা দেওয়া হলো যে বাংলাদেশ একটা ভারসাম্যপূর্ণ বিদেশ নীতি, পররাষ্ট্র নীতি চায়। এ বার্তা বহির্বিশ্বের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code