Sharing is caring!
উৎফল বড়ুয়া:
দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত সিলেট, সুরমা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক অনন্য শহর। পাহাড়, নদী, চা-বাগান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমন্বয়ে গড়া এই অঞ্চলকে বলা হয় “দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ”। সম্প্রীতি, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির অপূর্ব সমন্বয়ে গড়া এই পুণ্যভূমিকে আরও সুন্দর ও আধুনিক রূপে গড়ে তুলতে গত ১১ আগস্ট সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেছেন মোঃ সারওয়ার আলম। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি প্রশাসনিক দৃঢ়তা, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোচনায় এসেছেন।
অগ্রাধিকারে টেকসই উন্নয়ন ও জনকল্যাণ :
যোগদানের পরপরই ডিসি মোঃ সারওয়ার আলম তাঁর অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন—আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ, পর্যটন উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মানোন্নয়ন। তিনি বলেন, “সিলেট হচ্ছে প্রকৃতির কন্যা। এই কন্যা যেন প্রকৃতির মতোই থাকে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। উন্নয়ন হবে, তবে তা হতে হবে টেকসই উন্নয়ন।”
সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এর ঐতিহ্য ও পবিত্রতার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার আহ্বান জানান তিনি। তাঁর বিশ্বাস, “সবাই মিলে কাজ করলে পুণ্যভূমি সিলেটের ঐতিহ্য ধরে রেখে এটি বাংলাদেশের একটি মডেল জেলায় পরিণত করা সম্ভব।”
অবৈধ পাথর উত্তোলনে কঠোর অবস্থান :
দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথরে অবৈধ পাথর উত্তোলন রোধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। পাথর লুট বন্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনেন। তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপ সিলেটবাসীর আস্থা ও প্রশংসা অর্জন করেছে।
স্বাস্থ্য খাতে নতুন দিগন্ত :
সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা উন্নয়নে তিনি বিশেষ নজর দিচ্ছেন। হাসপাতালটিকে সিলেট অঞ্চলের অন্যতম মানসম্মত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৮০ একর জমি হস্তান্তর সম্পন্ন করেছেন, যা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যখাতে নতুন যুগের সূচনা করবে।
-রেলওয়ে ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরছে :
রেলওয়ে খাতে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায়ও তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। টিকিট কালোবাজারি বন্ধ, স্টেশনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং টিকিট বিক্রিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তিনি যাত্রীসেবায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
নগর ব্যবস্থাপনায় কার্যকর উদ্যোগ :
সিলেট নগরীর সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হয় তাঁর নেতৃত্বে। এতে হকারদের দৌরাত্ম কমেছে এবং নগরীতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। নগর পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও চলাচলযোগ্য রাখতে তাঁর এই উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে নাগরিক সমাজে।
জনগণের সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে সিলেট :
সিলেটের নাগরিক সমস্যা, উন্নয়ন দাবি ও স্থানীয় ইস্যুগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তিনি একে একে সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছেন। তাঁর অঙ্গীকার, “সিলেটকে আমি বাংলাদেশের একটি মডেল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সবাই সহযোগিতা করলে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।” সিলেট আজ এক নতুন আশার আলোয় উদ্ভাসিত, একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, সাহসী ও কর্মনিষ্ঠ প্রশাসকের নেতৃত্বে। প্রশাসকের দূরদৃষ্টি, প্রকৃতি কন্যা সিলেটকে টেকসই উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে সাজানোর এই প্রয়াসই হতে পারে “মডেল সিলেট” গড়ার এক নতুন অধ্যায়।
লেখক : সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী