আজ শনিবার, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চালের বাজারে সিন্ডিকেট , দাম নাগালের বাইরে

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ণ
চালের বাজারে সিন্ডিকেট , দাম নাগালের বাইরে

Sharing is caring!

Manual7 Ad Code

কামরুজ্জামান হিমু 

Manual2 Ad Code

চলছে আমনের ভরা মৌসুম । এ সময় চালের সংকট থাকার কথা নয় । তবুও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চালের দাম। একই অবস্থা মাংসের বাজারেও। সরবরাহ পর্যাপ্ত, তবুও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা ও মাসের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

Manual5 Ad Code

সরকারের শুল্ককর প্রত্যাহারে আমদানিও হচ্ছে। এতে বাজারে চালের সরবরাহ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও মিলাররা বাড়তি মুনাফা করতে মরিয়া। তাদের চালবাজিতে মিলপর্যায় থেকেই বস্তায় (৫০ কেজি) সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে দাম। এতে পাইকারি আড়তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম হুহু করে বেড়েছে। প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। ফলে মাসের ব্যবধানে এক কেজি সরু চাল কিনতে ক্রেতার সর্বোচ্চ ১০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। মূল্য ঠেকেছে ৮৫ টাকায়। মাঝারি ও মোটা চাল ৫-৭ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমনের ভরা মৌসুমেও চালের এমন চড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে ভোক্তার।

এদিকে বুধবার সাময়িক মজুতদারির কারণে চালের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে। তদারকির মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, সরকারি গুদামে (৮ জানুয়ারি) খাদ্যশস্য মজুত আছে ১২ লাখ ২৫ হাজার ৪৮২ টন। এর মধ্যে ৮ লাখ ৭ হাজার ১৭২ টন চাল এবং ৯ হাজার ২৭০ টন ধান রয়েছে। বাকিটা গম মজুত আছে। এছাড়া চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নভেম্বরে আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে নীতি সহায়তা নিলেও অসাধুদের কারসাজিতে ক্রেতার পকেট ফাঁকা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জানা যায়, মিল পর্যায়ে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগেও ৩ হাজার ৩০০ টাকা ছিল। ভালোমানের প্রতি বস্তা নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩০০ টাকা, যা আগে ৩ হাজার ৯০০ টাকা ছিল। একটু মাঝারি মানের নাজিরশাইল মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ১০০ টাকা, যা এক মাস আগেও ৩ হাজার ৬০০ টাকা ছিল। বিআর ২৭-২৮ জাতের চাল বস্তায় বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা, যা এক মাস আগে ২ হাজার ৫০০ টাকা ছিল।

কাওরান বাজার আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখন আমনের ভরা মৌসুম, কৃষকের চালও বাজারে এসে গেছে। পাশাপাশি আমদানিও হচ্ছে। এরপরও মিলাররা চালের দাম হঠাৎ বাড়িয়েছে। যে কারণে পাইকারি বাজারেও চালের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, মিল থেকে এনে পরিবহণ খরচ যুক্ত করে প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করছি, যা এক মাস আগেও ৩ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছি। নাজিরশাইল চালের বস্তা পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকা, যা আগে ৩ হাজার ৪০০ টাকা ছিল। নাজিরশাইলে আবারও মিলাররা দাম বাড়িয়েছে। ফলে ফের বেশি দামে আনতে হলে এ চালের দাম আরও বাড়বে। এছাড়া বিআর ২৭-২৮ জাতের চাল পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা, যা এক মাস আগেও ২ হাজার ৬০০ টাকা ছিল। তবে মিলপর্যায়ে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল কিছুটা কমেছে।

নওগাঁ মৌ অ্যাগ্রো অ্যারোমেটিক রাইস মিলের ম্যানেজার ইফতারুল ইসলাম বলেন, আমন মৌসুমের শুরুতেই বাজারে ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী। যে স্বর্ণা ধানের দাম আগে ১ হাজার ২০০ টাকা ছিল, সেই ধান এখন কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ১ হাজার ৪০০ টাকা মন। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে জিরা ও কাটারি ধানের। এ দুই প্রকার ধানের দাম বেড়েছে প্রতি মন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ চকদার বলেন, বন্যার কারণে দেশে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে নওগাঁসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ধান কাটার আগে অতিবৃষ্টির কারণে মাঠের অনেক ধান নষ্ট হয়ে যায়। কমবেশি প্রতিটি খেতে ২০-২২ শতাংশ ধান উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে।

Manual4 Ad Code

একই দিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা, যা এক মাস আগে ৭২-৭৫ টাকা ছিল। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০-৮৬ টাকা, যা আগে ৭০-৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিআর-২৮ ও পাইজম চাল প্রতি কেজি ৬৩-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ৫৭-৫৮ টাকা ছিল।

কাওরান বাজারে চাল কিনতে আসা মো. মিলন বলেন, সব সম্ভব বাংলাদেশে। চালের ভরা মৌসুমেও দাম বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে। আমরা ক্রেতারা জিম্মি ছিলাম, এখনো আছি।

Manual8 Ad Code

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে একাধিক সংস্থা তদারকি করে, কিন্তু ভোক্তা এ থেকে সুফল পাচ্ছেন না। পণ্যের দাম বাড়লেই কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু যে স্তরে কারসাজি হয়েছে, সেই স্তরে মনিটরিং হয় না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাকে নাজেহাল করার সুযোগ পাচ্ছে। কয়েক মাস পর রোজা শুরু হবে। এখন থেকে যদি বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো না হয়, ক্রেতারা আরও ভোগান্তিতে পড়বে।

বৃহস্পতিবার বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রতিদিনই বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে চালের বাজারে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছেন। অনিয়ম সামনে এলেই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও কেজিপ্রতি ১০ টাকা কম ছিল। প্রতিকেজি সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। পাশাপাশি প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকা। সঙ্গে দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি গরুর মাংস কিনতে ক্রেতার গুনতে হয়েছে ৭৫০-৭৮০ টাকা।

কাওরান বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. সালাউদ্দীন বলেন, কাপ্তান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ীদের একটা সিন্ডিকেট আছে। তারা সময় অসময় অতি অতি মুনাফা করতে দাম বাড়ায়। এখন বিয়ের মৌসুম থাকায় মুরগির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ টাকার আশপাশে থাকার কথা।

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code