আজ শনিবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকার সংস্কারে পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ণ
ঢাকার সংস্কারে পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়

Sharing is caring!

রেজাউল করিম সিদ্দিকী

ঐতিহাসিক মতে ঢাকার নগরায়ণ শুরু হয়েছিল খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে। কথিত আছে যে সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবীর প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ তিনি ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় ছিল তাই তিনি মন্দিরের নামকরণ করেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। কালক্রমে ঢাকেশ্বরী থেকে ঢাকা নামের উৎপত্তি। আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবাহ বাংলার রাজধানী ঘোষণা করেন তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহি:প্রকাশ স্বরূপ শহরে ঢাক বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনি লোকমুখে কিংবদন্তীর রূপ নেয় এবং তা থেকেই শহরের নাম ঢাকা হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে ঢাকা বেশ কিছুদিন জাহাঙ্গীরনগর নামে পরিচিত ছিল।
সম্রাট জাহাঙ্গীর ঢাকাকে সুবাহ বাংলার রাজধানী ঘোষণার মাধ্যমে ১৬১০ সালে ঢাকা প্রথম রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনামলে আধুনিক ঢাকা শহরের বিকাশ ঘটে। তখন এ অঞ্চল শাসন করতেন নবাবরা। এ সময় কলকাতার পরেই ঢাকা বাংলা প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর হয়ে উঠে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকা নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী হয়। ১৯০৫-৬০ সালের মধ্যে এই শহর বিভিন্ন সামাজিক, জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ঢাকাকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় যা ১৯৭২ সালে গৃহীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫ (ক) তে স্থায়ীভাবে স্বীকৃতি পায়।
ঢাকার নগরায়ণ খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে শুরু হলেও রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির পর এর নগরায়ণ ও উন্নয়ন নতুন মাত্রা পায়। বর্তমান দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা। বর্তমানে এ শহরের লোকসংখ্যা আড়াই কোটিরও বেশী। কাচা, সেমিপাকা, পাকা ও বহুতল ভবন মিলে বর্তমানে ঢাকায় ২২ লাখেরও বেশি ভবন রয়েছে। সাভার, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও অন্যান্য এলাকা মিলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ৯০ বর্গমাইল বা ১৩২৮ বর্গকিলোমিটারের কিছু বেশি। এই বিশাল এলাকায় উন্নয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ একটি দুরূহ ও জটিল প্রক্রিয়া। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ছাড়াও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ঢাকায় বাসযোগ্যতা বজায় রাখা ও এর পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প, কলকারখানা, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় এবং জীবন জীবিকা সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ শহরমুখী। ফলে প্রতিনিয়ত শহরের লোকসংখ্যা বাড়ছে। এই বাড়তি জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদাসমূহ বিশেষ করে বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা ক্রমান্বয়ে দুরূহ হয়ে পড়ছে। বাড়তি জনসংখ্যার চাপ সামলাতে নিত্য নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণের প্রয়োজন পড়ছে। ফলে শহরে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল রাস্তাঘাট আরো সংকুচিত হয়ে পড়ছে। উপরন্তু অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে দোকানপাট সাজানো, যত্রতত্র পার্কিং, ভাসমান দোকানপাট, অপরিকল্পিত স্থাপনা ইত্যাদি শহরের বাসযোগ্যতাকে আরো সংকুচিত করছে দিনের পর দিন। ১৯৫৩ সালে প্রণীত The Town Improvement Act, 1953 (East Bengal Act) Act No. of 1953 আইনের আওতায় ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের উন্নয়ন ও পরিবর্ধনের বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে গঠন করা হয় Dhaka Improvement Trust. পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে উক্ত আইন সংশোধনের মাধ্যমে DIT কে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়।

কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাজ মূলত রাজধানী ঢাকা ও এর সন্নিহিত এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়ন ও ঢাকার বাসযোগ্যতা বজায় রাখা। উল্লেখ্য যে DIT প্রতিষ্ঠার পূর্বে ঢাকার উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল না। ফলে যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ, অপরিকল্পিত অবকাঠামো ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন কাজ হয়েছে স্বাভাবিক নিয়মে। অত্যন্ত পরিতাপে বিষয় যে ঢাকার পরিকল্পিত উন্নয়ন ও বাসযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য গঠিত DIT ও বর্তমান রাজউক বিশাল ব্যয়, বহু জনবল ও অক্লান্ত শ্রম দিয়ে সফল হতে পারেনি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতি, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও কর্তব্যকর্মে চরম অবহেলার কারণে তাদের সকল উদ্যোগ প্রায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। উপরন্তু শহরের বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ সামলানো ও নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে প্রায়ই অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটিকে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। বর্তমানে ঢাকা শহরে সুপরিসর ফুটপাত থাকলেও পথচারীদের হাঁটার জো নেই। অবৈধ দখল ও ভাসমান দোকানপাট ফুটপাথ উপচে অনেক ক্ষেত্রে চলে এসেছে প্রধান সড়কে। যত্রতত্র বসছে সবজি ও ফলের দোকান। এখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং চলাচলের রাস্তাকে করছে সংকুচিত। অনুমোদনবিহীন ভবন নির্মাণের ফলে বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি ও ভবন ধ্বসের ঝুঁকি। মাত্রাতিরিক্ত ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল, জীবাশ্ম জ্বালানি দহন ও বর্জ্যের আধিক্যের কারণে বাতাসে বাড়ছে সিসা, কার্বন , মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বনসহ বিভিন্ন দূষণকারী পদার্থ।
যানবাহন ও কলকারখানার শব্দে অতিষ্ঠ নগরজীবন। যেখানে সেখানে বিলবোর্ড, আলোকসজ্জার কারণে একদিকে হচ্ছে বিদ্যুতের অপচয়, অন্যদিকে আলোক দূষণ। ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড ও শহরের জন্য মাস্