মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ধর্মীয় সংগঠক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি এবং শ্রীশ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীমন্দির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি স্বপন কুমার রায় (৭১) ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সিলেট থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়ার পথে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মহাসড়কে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
স্বপন রায় ছিলেন শ্রীমঙ্গল শহরের মৌলভীবাজার সড়কে অবস্থিত এস কে রায় কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী এবং এক সময়ের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও শিল্পোদ্যোক্তা প্রয়াত সত্যেন্দ্র কুমার রায় (এস কে রায়)–এর জ্যেষ্ঠ পুত্র। এস কে রায় শ্রীমঙ্গলসহ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার একজন অগ্রগামী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
পিতার আদর্শ অনুসরণ করে স্বপন রায় নিজেও শ্রীমঙ্গলের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি ছাড়াও শ্রীশ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীমন্দির পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সনাতন সম্প্রদায়ের একজন পরিচিত, গ্রহণযোগ্য ও শ্রদ্ধাভাজন নেতা হিসেবে তিনি সর্বমহলে সম্মানিত ছিলেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। ছেলে ও মেয়ে দুজনই প্রবাসে অবস্থান করছেন।
তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীমঙ্গল শহরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের সদস্যরা দেশে পৌঁছানোর পর আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ পর্যায়ক্রমে মৌলভীবাজার সড়ক সার্বজনীন দুর্গাবাড়ি, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, জগদ্বন্ধু আশ্রম, শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের আখড়া, বারোয়ারী কালীমন্দির এবং কলেজ রোডে অবস্থিত শ্রীশ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীমন্দিরে নেওয়া হয়।
এসব স্থানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। শত শত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন ও প্রার্থনায় অংশ নেন।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির নেতা মো.মহসিন মিয়া মধু এক শোকবার্তায় বলেন, স্বপন রায় ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক ছিল।তিনি প্রয়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পরে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী শ্রীমঙ্গল পৌর শ্মশানঘাটে তাঁর সন্তান, আত্মীয়স্বজন, শুভানুধ্যায়ী ও অসংখ্য অনুসারীর উপস্থিতিতে আজ দাহকার্য সম্পন্ন করা হয়।
এই জনপ্রিয় সমাজসেবক ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে শ্রীমঙ্গলের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়ী মহলে গভীর শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রীশ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীমন্দির প্রাঙ্গণে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব প্রিতম দাশ, এনসিপি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নিলয় রশিদ তন্ময়সহবিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা জানান।
জীবদ্দশায় স্বপন রায় অসংখ্য সামাজিক ও মানবিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।