Sharing is caring!
মো:জাফর ইকবাল:
সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই সূর্য পশ্চিম দিকে ডোবে যাচ্ছে। দিনের আলো নিভে আসছে ধীরে ধীরে। মৌলভীবাজার জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌমুহনা চত্বরে দেখা যায় মনমোগ্ধকর দৃশ্য।যেখানে সারাদিন মানুষের ভিড়, যানবাহনের শব্দ আর ব্যবসার কোলাহলে মুখর থাকে চারপাশ। কিন্তু সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়তেই এই ব্যস্ত শহরের চিত্র যেন এক অন্য রঙে রাঙিয়ে ওঠে ঝাঁকে ঝাঁকে চুড়ুই পাখি।
চৌমুহনার বৈদ্যুতিক খুঁটি, রাস্তার পাশের গাছের ডাল আর তারের ওপর আশ্রয় নেয় এক সময়ের গ্রামের অতিথি হাজারও চুড়ুই পাখি। মুহূর্তেই আকাশ ভরে যায় তাদের ডানার ঝাপটানি আর মিষ্টি কিচিরমিচিরে। শহরের ধুলো, ধোঁয়া ও যানবাহনের শব্দের মাঝেও প্রকৃতির এই কোমল সুর যেন মানুষের মনে এনে দেয় এক অনাবিল শান্তি।
স্থানীয়দের ভাষায়, এই দৃশ্য চৌমুহনার এক অবিচ্ছেদ্য সন্ধ্যাকালীন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সূর্যাস্তের আগে শত শত, কখনও হাজারো চড়ুই এসে জড়ো হয় এখানে। কেউ ডালে বসে, কেউ খুঁটির তারে, আবার কেউ উড়াউড়ি করে একে অপরের পাশে জায়গা খোঁজে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুরো এলাকা পরিণত হয় চড়ুইদের কিচিরমিচিরে এক জীবন্ত আবাসভূমিতে।
স্থানীয় দোকানদার অণিক বলেন, “প্রতিদিন বিকেল হলেই খুঁটির তারে সারি সারি চড়ুই এসে বসে। দোকানের কাজের ফাঁকে ওদের দেখি, মনটা ভরে যায়। শহরের ভিড়ের মধ্যেও এই পাখিরা যেন প্রকৃতির এক শান্ত বার্তা নিয়ে আসে।”
পরিবেশবিদদের মতে, শহরে চড়ুই পাখির উপস্থিতি ক্রমশ কমে গেলেও মৌলভীবাজার শহরের এই অংশে এখনও তাদের ঝাঁকে ঝাঁকে ফেরা একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। চড়ুই শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতীক নয়—এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রকৃতি প্রেমীরা বলছেন, এই দৃশ্য শুধু চোখে আনন্দ দেয় না, বরং শহুরে জীবনের ক্লান্ত মানুষদের মনে এক মুহূর্তের প্রশান্তিও এনে দেয়। দিনের শেষে সূর্য যখন ডোবে, দোকানপাটে আলো জ্বলে ওঠে, তখন চৌমুহনার আকাশজুড়ে চড়ুইদের কিচিরমিচির যেন বলে—
“দিন ফুরালো, এখন ঘরে ফেরার সময়।”
এভাবেই প্রতিদিন সন্ধ্যার এই মনোরম দৃশ্য শহরের মানুষকে মনে করিয়ে দেয়—যান্ত্রিকতার মাঝেও প্রকৃতি এখনো বেঁচে আছে, ঠিক মানুষের পাশে, শহরের কোলাহলের মধ্যেই। তবে কিছু দুষ্ট ছেলে গভীর রাতে ধরে নিয়ে যায় এই সব চুড়ুই পাখি।