আজ শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনকে মিসলিডিং বলেছে প্রেস উইং

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ১, ২০২৫, ০৯:১৩ অপরাহ্ণ
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনকে  মিসলিডিং বলেছে  প্রেস উইং

Sharing is caring!

Manual3 Ad Code

ট্টাইমস নিউজ 

সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ‘উদ্বেগজনক ও একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি’ তুলে ধরা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় দেশটি ‘ধর্মীয় চরমপন্থার কবলে পড়ার দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে।

এই চিত্র কেবল দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতাকে অতিসরলীকরণই করে নয়, বরং ১৮ কোটি মানুষের পুরো জাতিকে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করার ঝুঁকিও তৈরি করে বলে মনে করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

Manual7 Ad Code

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভুল চিত্র তুলে ধরে এমন বাছাই করা উসকানিমূলক উদাহরণের ওপর নির্ভর না করে গত এক বছরে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং পরিস্থিতির জটিলতা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেদনে ধর্মীয় উত্তেজনা এবং রক্ষণশীল আন্দোলনের কিছু ঘটনা তুলে ধরলেও এটি অগ্রগতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করে বলে মনে করছে সরকার। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নারীদের অবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণে বিশেষভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি এমন একটি সরকার যা নারীর অধিকার এবং নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। প্রতিবেদনের ফোকাস বাস্তব চিত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে, যা হতাশাজনক।

Manual3 Ad Code

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ‘চরমপন্থি শক্তির বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠোরভাবে পদক্ষেপ নেননি’ বলে আরেকটি দাবি শুধু মিথ্যাই নয়, এটি নারীর ক্ষমতায়নে তার আজীবন অঙ্গীকারকেও উপেক্ষা করে। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রফেসর ইউনূস নারী অধিকারের পক্ষে তার ওকালতিতে অবিচল ছিলেন। দুই কন্যার পিতা প্রফেসর ইউনূস তার পুরো কর্মজীবন এবং গ্রামীণ ব্যাংককে গড়ে তুলেছেন নারীর ক্ষমতায়নের গভীর বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে, যা তাকে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়। নারীর অধিকারকে এগিয়ে নেওয়া এবং তাদের স্বাধীনতা রক্ষায় তার আত্মোৎসর্গ তার কাজ ও খ্যাতির মূল ভিত্তি।

ধর্মীয় সহিংসতা সম্পর্কেও ‘ভুল ধারণা’ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানায় প্রেস উইং। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের মতো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ধর্মীয় সহিংসতার মধ্যে পার্থক্য করা জরুরি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়ের পর বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের অনেকগুলোই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হিসেবে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যদিও বাস্তবে সেগুলো ছিল মূলত রাজনৈতিক। রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়শই সমর্থন জোরদার করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে, যা বিষয়টিকে জটিল করে তোলে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ধর্মীয় নিপীড়নের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলার ঝুঁকি তৈরি করে। পুরো পরিস্থিতিকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হিসেবে দাঁড় করানো বিভ্রান্তিকর, কারণ এতে প্রকৃত রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক কারণগুলোকে উপেক্ষা করা হয়।

Manual3 Ad Code

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য তার প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করেছে এবং আইন প্রয়োগকারী ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচেষ্টার সাথে তার চলমান কাজ এই প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেয়। সামাজিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে উগ্রবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ভুল তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে চাপা দেওয়া উচিত নয়।

প্রেস উইং জানায়, বাংলাদেশ নীরবে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউজে রূপান্তরিত হচ্ছে প্রবৃদ্ধির গতিপথ নিয়ে, যা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রচুর সুযোগের প্রতিশ্রুতি দেয়। সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে, অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে। গত সাত মাসে রফতানি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। রাজনৈতিক উত্থানের পরেও ব্যাংকিং খাত অপরিবর্তিত রয়েছে এবং স্থানীয় মুদ্রা বিনিময় হার মার্কিন ডলারের প্রায় ১২৩ টাকায় স্থির রয়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকালে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, গত আট মাসে ৮৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূস যে অবিশ্বাস্য কাজ করেছেন তার স্বীকৃতি কোথায়? বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। গত সপ্তাহে তার চীন সফরের সময় চীন সরকার ও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে ২১০ কোটি ডলার ঋণ, বিনিয়োগ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে ঢাকায় বিনিয়োগকারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে মেটা, উবার এবং স্যামসাংয়ের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৫০টি দেশের ২ হাজার ৩০০ অংশগ্রহণকারী অংশ নেবেন। বাংলাদেশকে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্ববাসী ক্রমেই স্বীকৃতি দিচ্ছে। এটি আশা, শক্তি এবং অভূতপূর্ব সুযোগের একটি গল্প – এটি এমন একটি ঘটনা যা সম্মানের সঙ্গে বলার যোগ্য।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে মুষ্টিমেয় কিছু ঘটনা তুলে ধরেছে, যেমন একজন নারীকে হেনস্থা করা একজন পুরুষ অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়া একটি দেশের চিত্র আঁকার জন্য। এটি শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, ক্ষতিকরও। ১৮ কোটি মানুষের দেশে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে গোটা দেশকে সংজ্ঞায়িত করা অযৌক্তিক। বাংলাদেশ স্থিতিস্থাপকতা, সংস্কৃতি এবং প্রগতিশীল চিন্তার সমৃদ্ধ ইতিহাস সহ একটি বৈচিত্র্যময় এবং গতিশীল সমাজ আছে।

Manual6 Ad Code

প্রেস উইং বলে, ধর্মীয় উগ্রবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ একা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা অনেক দেশ বিভিন্ন রূপে মোকাবিলা করে। তবে, বাংলাদেশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামাজিক সংস্কার এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী উদ্যোগের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় অব্যাহতভাবে কাজ করেছে। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান বা অন্য যে কোনও সম্প্রদায় তার বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার জন্য দেশটির প্রতিশ্রুতি অবিচল রয়েছে। মিছিলে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণা ছড়ানো কট্টরপন্থীরা সবসময়ই থাকবে, তবে তাদের ক্ষোভের মধ্যে আগুন দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।

এছাড়া, চরমপন্থার উত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তরণের একটি অনিবার্য পরিণতি এই ধারণা অনেক বেশি নির্ধারক। দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা এবং প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ এমন শক্তিশালী শক্তি যা চরমপন্থী মতাদর্শের পূর্ণ উত্থানকে প্রতিহত করে চলেছে। চ্যালেঞ্জ রয়ে গেলেও বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অভিমুখ শুধু চরমপন্থীদের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করবে না। বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে এর যুব ও নারীরা একটি ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

পরিশেষে, বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস, গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রমাণ করে যে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দেশ এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখবে। কয়েকটি নেতিবাচক উদাহরণের দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে, আমাদের অগ্রগতি, স্থিতিস্থাপকতা এবং দৃঢ়তার বৃহত্তর চিত্রটি স্বীকার করা উচিত যা আজকের বাংলাদেশকে সংজ্ঞায়িত করে।

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code